রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৯ অপরাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি,রকালের খবর :
পিরোজপুর সদর উপজেলার সিকদারমল্লিক ইউনিয়নের পাঁচপাড়া বাজারে অবস্থিত একটি কালীমন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে অর্ধশত লোকের একটি দুর্বৃত্ত দল শাবল, হাতুড়ি, পিলার কাটার যন্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে মন্দিরে হামলা চালায়।
মন্দির কমিটির অভিযোগ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শহীদ মন্দিরের জায়গা দখলে নিতে তাঁর লোকজন দিয়ে এ হামলা চালায়।
মন্দির ভাঙচুরের প্রতিবাদে গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী পাঁচপাড়ায় পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কে গাছ ফেলে অবরোধ করে। সকাল ১১টার দিকে পূজা পরিষদের নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তাঁরা অবরোধ তুলে নেয়।
সূত্র জানায়, শনিবার রাত দেড়টার দিকে ৫০-৬০ জনের দুর্বৃত্ত দল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে মন্দিরে থাকা একটি কালী প্রতিমা ভেঙে পাশের খালে ফেলে দেয়। মন্দিরের জায়গায় থাকা টিনের চালাঘর এবং মন্দিরের ইটের তৈরি ভিতের একাংশ ভেঙে ফেলে। এ ছাড়া যন্ত্র দিয়ে মন্দিরের আরসিসি পিলার কেটে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী টের পেয়ে হামলাকারীদের প্রতিহতের চেষ্টা করলে হামলাকারীরা তাদের ওপর চড়াও হয়ে মারধর করে। এতে গৌরাঙ্গ লাল মাঝি (৫৫), দিলীপ মৃধা (৩৫) ও শুকুরঞ্জন মণ্ডল (৩৬) নামে তিনজন আহত হন। একপর্যায়ে এলাকার হিন্দু-মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
পুলিশ এ ঘটনায় মহিদুল ও অহিদুজ্জামান নামে দুজনকে আটক করেছে।
মন্দির কমিটির সম্পাদক সুধীর মাঝি অভিযোগ করে বলেন, সিকদারমল্লিক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শহীদ মন্দিরের জায়গাটি জবর দখল করে নেওয়ার জন্যই তাঁর লোকজন দিয়ে মন্দির ভাঙচুর করিয়েছেন। মন্দিরের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। তার পরও জোর করে মন্দির ভেঙে ফেলার চেষ্টা চলছে। এর আগে শহীদের বাবা রফিকুল ইসলামও মন্দিরের জায়গা দখলের চেষ্টা করেছিলেন।
সিকদারমল্লিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মন্দির কমিটির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র মিস্ত্রি জানান, মন্দিরের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান। এ অবস্থায় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাঁর লোকজন দিয়ে মন্দিরটি ভেঙে মন্দিরের জায়গা দখল করতে চাচ্ছেন। হামলাকারীরা মন্দিরের নির্মাণকাজের জন্য আনা আড়াই হাজার ইট ও পাশের এক মুসলমান ব্যবসায়ীর ইটও লুটে নিয়ে গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য নিতে চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। চেয়ারম্যানের এক আত্মীয় জানান, চেয়ারম্যান এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি এস এম জিয়াউল হক জানান, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। হামলার সন্দেহভাজন হিসেবে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
পিরোজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন গতকাল ভোরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, মন্দিরের জায়গা নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। তবে মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।